অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর
১. রক্তের গ্রুপ জানা প্রয়োজন কেন?
রক্ত মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি শুধু অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহনের মাধ্যম নয়, বরং রোগ প্রতিরোধ, বর্জ্য অপসারণ এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য।
অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগী, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি বা সার্জারি চলাকালীন রক্তের প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক রক্ত গ্রুপের মিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সব রক্তের গ্রুপ একে অপরের সাথে মেলে না।
পৃথিবীতে প্রধানত চার ধরনের রক্তের গ্রুপ রয়েছে:
১. A গ্রুপ
২. B গ্রুপ
৩. AB গ্রুপ (সর্বজনীন গ্রহীতা)
4. O গ্রুপ (সর্বজনীন দাতা)
এছাড়াও রেসাস ফ্যাক্টর (Rh ফ্যাক্টর) রয়েছে, যা রক্তের গ্রুপকে আরও দুই ভাগে ভাগ করে—Rh পজিটিভ (+) ও Rh নেগেটিভ (-)।
যদি রক্তদানের সময় রক্তের গ্রুপের মিল না থাকে, তাহলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল রক্তকে আক্রমণ করে, যার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি এতে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
২. কোষপ্রাচীর পানি শুষে স্ফীত হয় কেন?
জীববিজ্ঞানে কোষপ্রাচীরের পানি শোষণের প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনাটি ইমবাইবিশন (Imbibition) নামে পরিচিত।
ইমবাইবিশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শুকনো, কলয়েড জাতীয় পদার্থ তরল পদার্থকে শোষণ করে ফুলে ওঠে।
কেন কোষপ্রাচীর পানি শোষণ করে?
- কোষপ্রাচীরের মূল উপাদান হলো সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও পেকটিন, যা হাইড্রোফিলিক (পানিপ্রেমী)।
- এ উপাদানগুলো পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে এবং স্ফীত হয়।
- যখন কোষ পানি শোষণ করে, তখন এর অভ্যন্তরে চাপ (টারগর চাপ) বৃদ্ধি পায়, যা কোষকে শক্তিশালী ও দৃঢ় করে তোলে।
এর উপকারিতা কী?
- এটি বীজ অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ বীজের কোষপ্রাচীর প্রথমে পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে, তারপর অঙ্কুরিত হয়।
- উদ্ভিদকোষ শক্ত ও দৃঢ় থাকে, যার ফলে উদ্ভিদ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৩. উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয় কেন?
রক্তচাপ বলতে বোঝায় হৃদপিণ্ড যখন রক্ত পাম্প করে, তখন রক্তনালিতে সৃষ্ট চাপ। স্বাভাবিক রক্তচাপের মান হল ১২০/৮০ mmHg।
যখন এই চাপ ১৩০/৮৫ mmHg বা তার বেশি হয়, তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) বলা হয়।
এটি "নীরব ঘাতক" নামে পরিচিত কারণ—
- উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে, কিন্তু সরাসরি কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
- এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা ও চোখের জটিলতার অন্যতম কারণ।
- দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের রক্তনালি ফেটে যেতে পারে, যার ফলে স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত (Paralysis) হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ড বেশি পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. শ্বেত রক্তকণিকা কীভাবে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে?
শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা সৈনিক। এটি রোগজীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
শ্বেত রক্তকণিকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে—
-
বেসোফিল (Basophil):
- এটি হিস্টামিন নামক রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা দেহের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
- শ্বাসনালির সংকোচন, চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
-
ইউসিনোফিল (Eosinophil):
- এটি অ্যালার্জি প্রতিরোধে কাজ করে এবং পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- অতিরিক্ত হিস্টামিন উৎপাদন হলে ইউসিনোফিল তা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এলার্জির লক্ষণ কমায়।
-
নিউট্রোফিল (Neutrophil):
- এটি জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
-
মনোসাইট (Monocyte):
- এটি শরীরের যে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
- ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ করে।
অ্যালার্জির বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই
- যখন শরীরে পরাগরেণু, ধুলাবালি, খাবারের নির্দিষ্ট উপাদান বা ওষুধের প্রতি অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তখনই অ্যালার্জি হয়।
- শ্বেত রক্তকণিকা দ্রুত হিস্টামিন নিঃসরণ করে, যা প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
- রক্তের গ্রুপ জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল রক্তদানে প্রাণহানি হতে পারে।
- কোষপ্রাচীর পানি শোষণ করে স্ফীত হয়, যা উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
- উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক, কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে।
- শ্বেত রক্তকণিকা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করে, দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
সুস্থ থাকতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, এবং শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন, আমিন।
➤ শিক্ষার্থীর লেখা কিছুটা সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হয়েছে।
ফারজানা (দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী) - ঘাগটিয়া চালা মডেল হাইস্কুল।
0 coment rios: